মাত্র ১২০ টাকায় সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রাজবাড়ীতে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক ভাবে ৩১ জন তরুন-তরুনীকে চুরান্ত ভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮ নারী ও ২৩ জন পুরুষ সদস্য রয়েছে। এছাড়া ৫ জনকে রাখা হয়েছে অপেক্ষমান তালিকায়।
রবিবার (২০ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টায় রাজবাড়ী পুলিশ লাইনস ড্রিল শেডে প্রাথমিক ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ এবং ফুল দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান রাজবাড়ী পুলিশ সুপার (এসপি) মোছাঃ শামিমা পারভীন।
এ সময় খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নির্বাচিত পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ এবং আবেদন ফি ১২০ টাকা ছাড়া আর কোন টাকা না লাগায় পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন নির্বাচিতরা।
জানাগেছে, রাজবাড়ীতে ৩১টি শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইনে ১২০ টাকায় ২ হাজার ৩৩ জন তরুন-তরুনী পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে আবেদন করেন এবং যাচাই বাছাই শেষে ৩৫৪ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়। এরমধ্যে থেকে ১০৭ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষা শেষে প্রাথমিক ভাবে ৩১ জনকে চুরান্ত ও ৫ জনকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছে, তারা সবাই মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই উর্ত্তিণ হয়েছে। এখানে এতিম, সিকিউরিটি গার্ড, ভিক্ষাবৃত্তি, চায়ের দোকান, শ্রমিক, ডাব বিক্রেতা, রিক্মা ও ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা পরিবারের সন্তান রয়েছে।
পরীক্ষায় নির্বাচিত হওয়া রহিম বিশ্বাস বলেন, আমার বাবা একজন দিন মুজুর । যখন যে কাজ পায় সে কাজ করে। আমি নানা বাড়ি থেকে বড় হয়েছি। আজ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ১২০ টাকায় আমার চাকরি হয়েছে এবং আমি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছি। এই চাকরি পেয়ে আমার যেমন আনন্দ লাগছে, তেমনি আমি উপকৃত হয়েছি এবং ধন্যবাদ পুলিশ সুপারকে।
মাছুমা আক্তার বৈশাখী বলেন, আমার বাবা একজন রিক্মা চালক। টিউশনি করে আমি আমার পড়াশুনা চালিয়েছি এবং খুব কষ্ট করে বড় হয়েছি। পুলিশের চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি ১২০টাকা দিয়ে আবেদন করি আজ চাকরি পেয়েছি। খুব ভাল লাগছে।
রুমি আক্তার বলেন, আমার মা নাই। বাবা ভ্যান চালায়। ছোট বয়স থেকেই কষ্ট করে চাচাতো মামার বাড়ীতে বড় হয়েছি। মামারা আমার পড়াশুনাসহ সকল খরচ চালিয়েছে। এই বছর আমি এইচএসসি পাশ করি এবং ১২০ টাকার আবেদনের মাধ্যমে আজ আমার চাকরি হয়েছে।
চায়ের দোকানদার সুমন মিয়া বলেন, চায়ের দোকান করে ছেলেকে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করিয়েছি। পুলিশে চাকরির পরীক্ষায় সে আজ টিকেছে এবং কোন টাকা পয়সা ছারাই আমার ছেলের চাকরি হইছে। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া, তিনি আমার স্বপ্ন পুরন করেছে।
ভ্যান চালক মিরাজ শেখ বলেন, ভ্যান চালায় মেয়েকে মানুষ করে পুলিশে চাকরি দিতে পারছি। খুব খুশি হয়েছি।একটা টাকাও লাগে নাই।
গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার ভাগনি এতিম মানুষ। ওর মা ছোট বেলায় মারা গেছে। তারপর থেকে ওহ আমার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ীতে থেকে বড় হয়েছে। এই পুলিশের চাকরি পাওয়াতে খুব ভাল লাগছে। এখন বাকী জীবন ওহ ভাল থাকতে পারবে। তাছাড়া এই চাকরিতে আমাদের কোন টাকা লাগে নাই।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার (এসপি) মোছাঃ শামিমা পারভীন বলেন, রাজবাড়ীতে পরীক্ষায় যারা অংশ গ্রহন করেছে তাদের মধ্যে থেকে ৩১ জনকে চুরান্ত ভাবে নির্বাচিত হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকায় অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর সদস্য হওয়ার সুযোগ লাভ করেছে। নির্বাচিতদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার মানুষের সন্তান রয়েছে। যারা আজ মেধা ও সম্পূর্ণ যোগ্যতা ভিত্তিতে এই পর্যন্ত এসেছে। এরমাধ্যমে ওই পরিবার গুলো তাদের সন্তানকে কষ্ট করে মানুষ করার প্রাপ্য সন্মান পেলেন। এখন নিশ্চই তাদের সন্তানরা তাদের ভাল রাখবে।
এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্যসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রা.র.খ